রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:১৪ অপরাহ্ন
কালের খবর : বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরা এবং জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়কে কেন্দ্র করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এবং আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের ছেলে সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, সহ-গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আনিসুর রহমান খোকন তালুকদার, সহ-পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক কাজী রওনাকুল ইসলাম টিপু, নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুন, মশিউর রহমান বিপ্লবসহ গতকাল পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। একই সাথে তল্লাশির নামে চলছে ঘরে ঘরে ভাঙচুর ও পরিবারের সদস্যদের সাথে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ।
গতকালও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, কেন্দ্রীয় নেতা নাজিম উদ্দিন আলম, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশারফ হোসেনসহ সারাদেশে শতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। আটকের পর নেতাকর্মীদের পরিবারের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করছে বলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেছেন।
বেগম খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরা দিয়ে ফেরার পথে হাইকোর্টের সামনে পুলিশের গাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও প্রিজনভ্যান থেকে আটক দুই ব্যক্তিকে ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা তিনটি মামলায় দলটির ৯০০ নেতাকর্মীকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরীর শান্তিনগরের বাসভবন, যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেলের বাসভবন, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবুর বাসভবন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসানের পল্লবীর বাসভবন, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও আইনজীবী রফিক সিকদারের বাসা, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেরা আলাউদ্দিনের শান্তিনগরের বাসভবন, জাতীয়তাবাদী যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী আজিজুল হাকিম আরজর বাসাসহ শত শত বিএনপি নেতাকর্মীর বাসায় বাসায় পুলিশি তল্লাশির নামে ব্যাপক তান্ডব চালানো হয়েছে। এদিকে পল্টন, মুগদা, সবুজবাগ, রামপুরা, শাহবাগ, রমনা, মতিঝিল, তেজগাঁও, মোহাম্মদপুর, হাজারীবাগ, শেরেবাংলা, কলাবাগান, মিরপুর, উত্তরা থানাসহ অধিকাংশ ওসির সাথে কথা বলে জানা যায়, যাদের বিরুদ্ধে মামলা নেই তাদেরকে নতুন করে মামলা দেয়া হয়েছে। আর যাদের বিরুদ্ধে মামলা আছে তাদেরকে পলাতক দেখিয়ে কোর্টে চালান দেয়া হয়েছে। গ্রেফতারের আতঙ্কের বিষয়ে কয়েকজন শীর্ষ নেতা বলেন, হঠাৎ গ্রেফতার অভিযানে শীর্ষ ও মাঠপর্যায়ের নেতারা কিছুটা হকচকিয়ে গেলেও ভেঙে পড়েনি বিএনপি। জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় সরকার বিএনপিপ্রধানকে সাজা দিতে চাইছে। বিএনপিকে দুর্বল করে নির্বাচনি বৈতরণী পার হওয়া সরকারি দলের মূল টার্গেট হিসেবে নিয়েছে বলে মনে করি।
গণগ্রেফতার, মিথ্যা মামলা বাড়ি বাড়ি তল্লাশি ঘরছাড়া যশোর বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মী : ঘরছাড়া যশোর বিএনপির প্রথম ও মধ্যম সারির সব নেতা। হামলা আর মামলায় আক্রান্ত নেতাকর্মীরা ঘরে ঘুমাতে পারছেন না। সর্বত্র পুলিশি অ্যাকশন-হয়রানি। যেনতেনভাবে মামলায় জড়ানো হচ্ছে দলীয় নেতাকর্মীদের। বাদ যাচ্ছেন না জোটের নেতাকর্মীরাও। ইতিমধ্যে এ অঞ্চলের জাতীয়তাবাদী শক্তির প্রাণপুরুষ বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের দুই ছেলেকে আটক করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। দফায় দফায় মামলায় জড়িয়ে অন্য নেতারাও এলাকা ছাড়া করা হচ্ছে। দলের পক্ষে বিবৃতি বা একটি প্রেস কনফারেন্স করার মতোও মধ্যম সারির কোন নেতাকে পুলিশের সাজানো মামলার বাইরে রাখা হচ্ছে না। হয় তারা জেলে, না হয় আত্মগোপনে। তার পরও নিস্তার নেই। নেতাকর্মীশূন্য বাড়িতে চলছে পুলিশি অভিযান। সবকিছু মিলে যশোরের বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী এখন ফেরারি জীবনযাপন করছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলা বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের প্রায় ১০ হাজার নেতাকর্মী মামলার খড়গ মাথায় নিয়ে ঘুরছেন।
খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলাম, তার ছোট ছেলে খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতসহ যশোর জেলা বিএনপির অধিকাংশ নেতা ও সব থানার নেতাই ১০-১৫টি মামলার আসামি। একই অবস্থা জেলা যুবদল, ছাত্রদল, শ্রমিক দল, কৃষক দল, মহিলা দলসহ সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ক্ষেত্রে। কারণে-অকারণে এসব নেতাকর্মীর নামে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দিচ্ছে। ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের অতি-উৎসাহী কিছু দারোগা তদন্ত ছাড়াই বিএনপি ও জামায়াতের জেলা থেকে শুরু করে উপজেলা, পৌর এমনকি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নামে দিচ্ছে মামলা।
গত বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় যশোরের ৮ থানায় ১৪টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় বিএনপির ১২৫ জন নেতাকর্মীকে আটক করেছে। কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। জেলা বা উপজেলা পর্যায়ে নেতৃত্ব দেন এমন সব নেতা ৪-৫টি মামলার আসামি। রাজনীতির মাঠ ছেড়ে এসব নেতারা বর্তমানে ব্যস্ত থাকছেন আইন আদালত নিয়ে। তার পরও বন্ধ হচ্ছে না মামলার খড়গ। একের পর এক নতুন নতুন মামলার আসামি করে তাদের পাঠানো হচ্ছে কারাগারে।
গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে রাজধানীর শান্তিনগরের বাসা থেকে ডিবি পুলিশ ধরে নিয়ে যায় বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিতকে। তাকে রমনা থানায় পুলিশের রুজু করা দুটি মামলায় আসামি করা হয়েছে। ওই মামলায় বুধবার আদালতে হাজির করে অমিতকে দুইদিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। ওইদিন রাত ৯টার দিকে তরিকুল ইসলামের বড় ছেলে শান্তুনু ইসলাম সুমিত ছোট ভাই অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের জন্য ওষুধ ও গরম কাপড় নিয়ে মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে যান। এসময় তিনি ডিবি কার্যালয়ের গেট থেকে আটক হন। একই মামলায় তিনি ৫ দিনের পুলিশি রিমান্ডে রয়েছেন।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৮ তারিখের রায়কে কেন্দ্র করে যশোরের পুলিশ মরিয়া হয়ে উঠেছে। মামলা দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের ঘরছাড়া করছে। এমন কোন নেতাকর্মী নেই যারা মামলার আসামি নন।
তিনি বলেন, দশম জাতীয় সংসদ ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ঘিরে যশোরে প্রায় চারশ মামলার মামলা দেয়া হয় আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এসব মামলা থেকে বিএনপি নেতাকর্মীরা জামিন লাভ করে বাইরে আসলেও পরবর্তীতে আবারও নতুন মামলার জালে আটকে দেয়া হচ্ছে। রাজনৈতিক কর্মসূচি থেকে বিএনপিকে দূরে রাখতে পরিকল্পিতভাবে একের পর এক মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে নেতাকর্মীদের।
ইতিমধ্যে জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে গণগ্রেফতার ও পুলিশি নির্যাতনের তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়ে বিবৃতি দেয়া হয়েছে। বিবৃতিতে দলটির নেতারা অভিযোগ করেন, বর্ষীয়ান জননেতা তরিকুল ইসলামের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে অগণতান্ত্রিক অবৈধ সরকার হীন ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। এরই ধারাবাহিকতায় সরকার অসুস্থ এ বর্ষীয়ান নেতাকে মানসিক চাপে ফেলতে তার ছোট ছেলে দলের খুলনা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত ও বড় ছেলে শান্তুনু ইসলাম সুমিতকে বিনাকারনে আটক করে রিমান্ডে নিয়েছে। একই সাথে তার রাজনৈতিক জেলাসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিএনপি নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতার ও মিথ্যা মামলা দেয়া হচ্ছে।
বগুড়ার শেরপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্রদল সভাপতি গ্রেফতার : বগুড়ার শেরপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবলু ও উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি আবদুর রাজ্জাককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে তাদের নিজ নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে শহরের টাউন কলোনিস্থ বাসা থেকে বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবলু (৫৮) ও শহরতলীর খন্দকারটোলা এলাকার বাসা থেকে ছাত্রদল নেতা রাজ্জাক (৩৫) কে গ্রেফতার করা হয়।
শেরপুর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম তাদের গ্রেফতারের সত্যতা নিশ্চিত তিনি জানান, একটি দুর্নীতির মামলায় আদালত আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেছে। এই রায়কে কেন্দ্র করে তারা নাশকতার প্রস্তুতির পরিকল্পনার সময় শহরের টাউন কলোনি এজে উচ্চ বিদ্যালয়ের বারান্দা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয় ও বাকিরা পালিয়ে যায়। এ সময় ওই স্থান থেকে নাশকতার কাজে ব্যবহারের জন্য ১৬ বোতল পেট্রল পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে শেরপুর থানায় নাশকতার প্রস্তুতির পরিকল্পনাকরী হিসেবে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা নং-১।
গ্রেফতারকৃত বিএনপি নেতা শহিদুল ইসলাম বাবলুর স্ত্রী নিলুফা ইয়াসমিন জানান, রাজনৈতিকভাবে হেনস্তা করার জন্য গ্রেফতার করে এ মামলা দায়ের করা হয়েছে।